বৃদ্ধা ময়নার কাছে ঘৃণার বিষয় এই জীবনে নতুন করে "নাগরিকত্বের পরীক্ষা" --স্বামীহারা, শরীরে চামড়া কুঁচকে যাওয়া, এক সময়ের শ্রমিক আজকে...
বৃদ্ধা ময়নার কাছে ঘৃণার বিষয় এই জীবনে নতুন করে "নাগরিকত্বের পরীক্ষা"
--স্বামীহারা, শরীরে চামড়া কুঁচকে যাওয়া, এক সময়ের শ্রমিক আজকের বৃদ্ধা ময়নার জীবনের সূর্য এখন ডুবু-ডুবু! ডি সংক্রান্তীয় সমস্যা থাকায় বৃদ্ধা বঞ্চিত রেশন অথবা বৃদ্ধ পেনশন থেকে! সরকারি সকল প্রকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তাকে! সংবিধান একজন ভারতীয়কে যে সুবিধা প্রদান করে তা থেকে তিনি বঞ্চিত!...
🖋️পারিজাত নন্দ ঘোষ
জানি না কবে এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধপ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সোচ্চার হয়ে প্রতিবাদের সমান্তরাল ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে আর সূচনা করবে এক গঠনমূলক সম অধিকার ও বৈষম্যহীন নতুন যুগের !
আবারও বলতে হয়, "জানিনা কতটা পথ হাঁটলে ভারতীয় হওয়া যায় !"
গ্রামের অতি সুন্দরী যুবতী "দেবী"! মানে আজকের প্রায় শতবর্ষের বৃদ্ধা ময়না বর্মন! নথী মতেও তার বর্তমান বয়স ৯২ বছর!
কি দেখননি তিনি? স্বাধীনতা, দেশভাগ, প্রথম নির্বাচন! সবটাই মনে আছে তার !
বর্তমান ধুবড়ি জেলার মাইতেল গ্রামে জন্মগ্রহণ করা ময়নার অল্প বয়সে বিয়ে হবার পর এখনকার ঠিকানা একই জেলার গৌরীপুর বিধান সভা ও গোলকগঞ্জ থানার অন্তর্গত কেদার(খন্ড-২) গ্রামে।
সেই তো স্বাধীনতার পর থেকে যতবার নির্বাচন হয়ে এসেছে ময়না রীতিমতো ভোট দিয়েছেন !
২০০৭ থেকে কেনো ময়নাকে ভোট দিতে দেওয়া হয় না,সে নিজেও জানে না! কেনো কারা কিভাবে ময়নার ভোটার তালিকায় ডি বসিয়ে দিলো সেটাও তার কাছে এক অজানা বিষয় !
তারপর ২০১৭-১৮ তে তথাকথিত ফরেইনার্স ট্রাইবুনাল থেকে নোটিশ! আইনি লড়াই...!
না, এসব আর ভালো লাগেনা বৃদ্ধা ময়নার !
স্বামীহারা, শরীরে চামড়া কুঁচকে যাওয়া রাজবংশী সম্প্রদায়ের এক সময়ের শ্রমিক আজকের বৃদ্ধা ময়নার জীবনের সূর্য এখন ডুবু-ডুবু! স্বামীর মৃত্যুর পর ময়নাকে তিন সন্তান প্রতিপালন করতে হয়েছে! দারিদ্রতায়, সংসারের দ্বায়িত্বে রীতিমতো এক সংগ্রামের জীবন পার করতে হয়েছে !
পরবর্তী সময়ে একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পর তার আশ্রয় সেই একই গ্রামে বিবাহ সূত্রে তার মেয়ের ঘরে !
এই জীবন পরিক্রমায় নতুন করে "নাগরিকত্বের পরীক্ষা" বৃদ্ধা ময়নার কাছে এক ঘৃণার বিষয়! এক বিরক্তিকর বিষয় !
সিজেপিকে কাছে পেয়ে ময়না কিছুটা শান্ত-আশ্বস্ত !
কিন্তু তার মনে যে প্রচন্ড এক বিতৃষ্ণা ক্রিয়া করছে তা দেখলে বুঝতে অসুবিধে হয় না !
তথাকথিত স্বদেশী প্রমাণের যে নিকৃষ্টতম ব্যবস্থার তিনি শিকার সে বিষয়টি তিনি মনেই করতে চান না! সহ্য হয় না তার এই চরম বঞ্চনার যন্ত্রণা! দেশের স্বাধীনতা দেখা, স্বাধীন হবার আগেই এই মাটিতে জন্মগ্রহণ করা বহু ইতিহাসের স্বাক্ষী থাকা ময়না বর্মন নিজের রাষ্ট্রহীনতার কথাটা মনে করে ঘৃণা আর বৃদ্ধি করতে চান না !
দীর্ঘদিন ধরে চর্মরোগে ভুগছে! কোভিড-লকডাউনের জটিল সময়ে মেয়ের বাড়ির আর্থিক পরিস্থিতিও খারাপ! ডি সংক্রান্তীয় সমস্যা থাকায় বৃদ্ধা বঞ্চিত রেশন অথবা বৃদ্ধ পেনশন থেকে! সরকারি সকল প্রকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তাকে! সংবিধান একজন ভারতীয়কে যে সুবিধা প্রদান করে তা থেকে তিনি বঞ্চিত!
এখন তার প্রয়োজন শরীরের অসহ্য চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে মলমের-ঔষধের, পেটের ক্ষুদা মেটানোর জন্য খাবারের!
আর তথাকথিত স্বদেশী প্রমাণের যে নিকৃষ্টতম ব্যবস্থার তিনি শিকার সে বিষয়টি তিনি মনেই করতে চান না! সহ্য হয় না তার এই চরম বঞ্চনার যন্ত্রণা! দেশের স্বাধীনতা দেখা, স্বাধীন হবার আগেই এই মাটিতে জন্মগ্রহণ করা বহু ইতিহাসের স্বাক্ষী থাকা ময়না বর্মন নিজের রাষ্ট্রহীনতার কথাটা মনে করে ঘৃণা আর বৃদ্ধি করতে চান না !
তার স্পষ্ট কথা, "যে কয়েকটি দিন বেঁচে আছি, আমাকে শান্তিতে বাঁচতে দেক ওরা !"
ময়না বর্মন নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতেও লজ্জ্বা বোধ করেন কেননা যারা প্রমাণ করবেন তারা কেউই এই দেশে ময়না বর্মনের আগে জন্মগ্রহণ করেনি !
বৃদ্ধা ময়নার কাঁপা ঠোঁটে বেজে উঠে যুগ যুগ ধরে ঘটে আসা সাধারণ মানুষর উপর বঞ্চনাার বিদ্রোহ সুর !
এই ভারত ভূমিতে বহু দেবীকে পূজা করে আসলেও এই "দেবী" আজ সন্দেহযুক্ত !
ময়না দেবী যদি সন্দেহযুক্ত, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে যতটা লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে, ময়না বর্মনের ভোটও সেখানে ছিলো সেই ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারাই সরকার অথবা বিরোধী সংসদ ও বিধানসভা গঠন হয়েছে! তাহলে তারাও কি সন্দেহ যুক্ত নন?
ময়না দেবী যদি অবৈধ, তার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়ারা কি বৈধ ?
না, ময়না দেবী আজ আর ট্রাইবুনালেও যেতে চান না! ঘৃণা হয় তার! বিরক্তিকর অধ্যায়ের পাতাটাও খুলতে চান না !
তিনি শুধু একটু শান্তি চান !
ময়না দেবী তার কাঁপা ঠোঁটে অনেক কিছুই বলতে চান কিন্তু বলা হয়ে উঠেনা ! এই ভূমিতে জন্মগ্রহণ করেও রাষ্ট্র ও সরকারের ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে নাগরিকত্বের প্রমাণের নিষ্পেষিত, বঞ্চিত, অবহেলিত লাখো মানুষের অধিক ভীতিগ্রস্তের পর তিক্ত হয়ে সর্বশেষে সম্মিলিত ক্ষোভের বিদ্রোহের যে ভাষা সেটাই হয়তো তার কাঁপা ঠোঁটে বলতে চান, "আমি অন্য কোথাও যাবো না, আমি এই দেশেতেই থাকবো "
No comments